প্রথম ছবিটি তোলা হয়েছিল ১৯৬৯ সালের ৩০ অক্টোবর। লন্ডনের গ্রান্ড রয়েল প্যালেস হোটেলে বামদিক থেকে শেখ হাসিন্য, শেখ মুজিব, সাপ্তাহিক জনমত সম্পাদক ওয়ালী আশরাফ ও ’শেখ মুজিব ডিফেন্স ফান্ড’ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন।
আর সাথে সংযুক্ত চাঁদা রসিদটি ১৯৬৮ সালে বিলেতে গঠিত ’শেখ মুজিব ডিফেন্স ফান্ড’ এর। অর্থ দাতা বার্মিংহ্যাম প্রবাসী আলোকচিত্রী ইউসুফ চৌধুরী। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শেখ মুজিবকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে এবং তার পক্ষে আইনী লড়াই জোরদার করতে গঠিত হয়েছিল এই ডিফেন্স ফান্ড।
মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেলেন বঙ্গবন্ধু। বিলেতপ্রবাসী বাঙালিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা জানাতে ২৬ অক্টোবর ১৯৬৯ লন্ডনে পৌছেন বঙ্গবন্ধু। উঠেছিলেন লন্ডনের অক্সফোর্ড স্ট্রিটস্থ মাউন্ট রয়্যাল হোটেলে। তাঁর বড় কন্যা শেখ হাসিনা ও জামাতা ড.ওয়াজেদ মিয়া সেসময় লন্ডনে ছিলেন। ০১ নভেম্বর ১৯৬৯ পূর্ব লন্ডনের গ্র্যান্ড প্যালেস হল এবং ০২ নভেম্বর বার্মিংহ্যামের ডিগবিথ হলে প্রবাসীদের দেয়া দুটি সংবর্ধনায় বক্তৃতা করেন শেখ মুজিব।
বিলেত সফরের প্রাক্কালে ২৩ অক্টোবর ১৯৬৯ ইত্তেফাক পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু লন্ডন সফর সম্পর্কে বলেছেন , ’, আইয়ুব সরকার যখন উহার এক দশকের রাজত্বের শেষ পর্যায়ে পর্বপাকিস্তানীদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ের সংগ্রামকে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহৃ করিয়া দেয়ার জন্য সম্ভাব্য সব দিক হইতে নির্যাতন আর নিপীড়নের যাঁতাকল ভীমবেগে পরিচালিত করিয়াছিল, পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রামী নেতৃবৃন্দ এবং সংগঠন হিসেবে আওয়ামীলীগ এক মহান সংগ্রামে আপসহীনভাবে সংগ্রাম করিয়া যাইতেছিল, তখন লন্ডনের প্রবাসী পাকিস্তানীরা , বিশেষ করিয়া বাঙালিরা যেভাবে অপিরসীম সাহায্য ও সহানুভূতির হস্ত সম্প্রসারিত করিয়াছিলেন, সে স্মৃতি কোনদিন ভুলিবার নয়।
... তথাকথিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যেদিন আমাদের আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছিল, সেদিন প্রবাসী বাঙালিদের হৃদয় কাঁদিয়া উঠিয়াছিল। তাহারা আমাদের পক্ষ সমর্থনের জন্য নিজেদের অর্থ ব্যয় করিয়া বিশিষ্ট আইনজীবী টমাস উইলিয়ামকে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হইতে কুর্মিটোলার বিচারকক্ষে পাঠাইয়াছিলেন।
.. সেদিনও প্রবাসী বন্ধুরা আওয়ামীলীগের বন্যাদূর্গত সাহায্য তহবিলে ৫,৬৮০ টাকা প্রেরণ করিয়া ছিলেন। ... তাহাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন এবং তাঁহাদের সংগ্রামী ভূমিকার প্রতি একাত্মতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে লন্ডন যাওয়া আমি কর্তব্য বলিয়া বিবেচনা করি!!!
বিলেত প্রবাসী বাঙালিরা প্রথম বৈদেশিক মুদ্রা তিন লাখ আটাত্তর হাজার আটশ একাত্তর পাউন্ড একুশ পেনি পাঠিয়ে ছিলেন সেই ১৯৭২ সালে। আর সেটি ছিল বাংলাদেশের রাস্ট্রীয় কোষাগারে প্রথম বৈদেশিক মুদ্রার বড় যোগান।
মুজিব জন্মশতবর্ষ আর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির প্রাক্কালে শ্রদ্ধা জানাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার প্রিয় বিলেতপ্রবাসী মানুষদের প্রতি। প্রবাসীদের এমনতর নিখাদ ভালবাসার অবিদিত ইতিহাসের গল্প অনেক।
।। উজ্জ্বল দাশ।। প্রতিষ্ঠাতা, লন্ডন ১৯৭১, প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান।