৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ : বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাইকেলে করে যশোর রোড থেকে ঝিকরগাছা উপজেলার দিকে যাচ্ছে। এই দিনে যশোর পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল।
একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনী যশোরের চৌগাছা উপজেলার সলুয়া বাজারে তৈরি করেছিল অগ্রবর্তী ঘাঁটি। পাক বাহিনী যশোর থেকে ছয়টি জেলা নিয়ন্ত্রণ করতো। ২০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যশোর সেনানিবাস দখলে অভিযান শুরু করে। ওই সময় পাক বাহিনীর পশ্চিমাঞ্চলের ঘাঁটি চৌগাছা ঘিরে ফেলে সম্মিলিত বাহিনী। এরপর ২২ নভেম্বর রাতে চৌগাছার পতন হয়। ডিসেম্বরের শুরুতে যশোর সেনানিবাসের তিন দিকেই মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী শক্ত ঘাঁটি গেড়ে বসে। প্রতিরোধ যুদ্ধের শেষ অভিযান চলে ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর। এ তিন দিন যশোর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এ সময় মিত্রবাহিনীও সীমান্ত এলাকা থেকে যশোর সেনানিবাসসহ পাক আর্মিদের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা ও গোলা নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে পর্যুদস্ত পাকবাহিনী ৫ ডিসেম্বর থেকে পালাতে শুরু করে। এ দিন সকাল ও দুপুরে পাকিস্তানের নবম ডিভিশনের সঙ্গে ভারতীয় নবম পদাতিক ও চতুর্থ মাউন্টেন ডিভিশন এবং মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড লড়াই হয়। বিকালেই পাক সেনা অফিসাররা বুঝতে পারে- যশোর দুর্গ আর কোনোভাবেই রক্ষা করা সম্ভব নয়।
বেনাপোল অঞ্চলে দায়িত্বরত লে. কর্নেল শামসকে সেদিন নওয়াপাড়ার দিকে দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন ব্রিগেডিয়ার হায়াত। আর নিজের ব্রিগেড নিয়ে রাতের আঁধারে যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে তিনি পালিয়ে যান খুলনার দিকে। পালানোর সময় ৫ ও ৬ ডিসেম্বর শহরতলীর রাজারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই হয়।
৬ ডিসেম্বর বিকালে মিত্রবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী সেনানিবাস দখল করে। রাতে ৮ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর মঞ্জুর ও মিত্রবাহিনীর নবম ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল দলবীর সিং যশোর সেনানিবাসে প্রবেশ করেন।